গেরদা মসজিদ

Page Visited: 209
118 Views

ঐতিহাসিক গেরদা মসজিদ

ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে শহর থেকে মাত্র তিন মাইল দূরবর্তী এক নিভৃত গ্রাম ‘গেরদা’ । সেখানেই ৪০০ বছরের প্রাচীন এই মসজিদের অবস্থান। এই মসজিদে এমন কিছু ইসলামিক নিদর্শন আছে যা অনেকেরই অজানা। তার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব  নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র  মুই বা দাড়ি মোবারক এছাড়াও রয়েছে হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) এর ব্যাবহৃত পোশাক ও অন্যান্য বুজুর্গ ব্যাক্তিদের ব্যবহৃত জিনিস সমূহ। আজকের এই তথ্য চিত্রে এমন অজানা কিছু তথ্য জানাতে চেষ্টা করবো।

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে হযরত শাহ্ আলী বোগদাদী (রঃ), তার ভগ্নিপতি আত্মীয়-স্বজন ও অনুসারীসহ ফরিদপুরের তৎকালীন ঢোল সমুদ্রের তীরবর্তী জঙ্গলে আগমন করেন। জঙ্গল পরিস্কার করে তিনি সেখানে গদি স্থাপন করেন। ধারনা করা হয় এই গদি শব্দ থেকেই  পরবর্তীতে ‘গেরদা’ নামের উৎপত্তি হয় । ঢোল সমুদ্র এলাকাটি শতশত বছর আগে  ঢোলনগর নামেও পরিচিত ছিল।

হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী (রঃ) -এই স্থান থেকে বিভিন্ন আউলিয়াদের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করেন। কথিত আছে হিজরী ১০১৩ সালে প্রাচীন মসজিদটি জনৈক আজল খাঁ নির্মাণ করেছিলেন। এই আজল খাঁ কে ছিলেন তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে প্রাচীন সেই মসজিদটি এখন আর নেই তবে সেই মসজিদের মূল্যবান বেলে পাথরের অংশবিশেষ আজও রয়েছে মসজিদের প্রাচীরের দুটি ফটকে। সেই সাথে মসজিদের অভ্যন্তরে একটি শীলালিপিরও দেখা পাওয়া যায় সেখান থেকেই ধারনা পাওয়া যায় মসজিদটির বয়স। মসজিদে রক্ষিত রয়েছে ৫টি মূল্যবান নিদর্শনসমূহ, যা বছরে ৫দিন অত্যন্ত তাজিমের সাথে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ( ফাতেহা ইয়াজদাহম বড় পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রঃ এর ওফাত দিবসে) ঈদ ই মিলাদুন্নবী,  শবে বররাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) এই ৫দিন।

পঞ্চদশ শতকের প্রারম্ভে হজরত শাহ্ আলী বাগদাদী (রঃ) এদেশে পাঠান রাজত্বের প্রথম দিকে শতাধিক আউলিয়া, গাউস, কুতুব সাথে করে ইসলামী মূল্যবান কিছু নিদর্শনসহ বাগদাদ হতে দিল্লী হয়ে ফরিদপুরের গেরদায় আগমন করেন। মসজিদের পাশে হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী (রঃ) এর স্নেহধন্য পুত্র হযরত শাহ্ ওসমান (রঃ)-র কবর বিদ্যমান আছে।  অনেকেই হয়তো জানেন না ঢাকার মিরপুর মাজার রোডে অবস্থিত হযরত শাহ আলি বাগদাদি এই গেরদা থেকেই সেখানে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরন করেন। তবে তার স্বজনরা গেরদায় রয়ে যায় তার বংশধরদের কবর আজও এই গেরদায় রয়েছে।

 

আশির দশকে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর ভারপ্রাপ্ত মাননীয় সদস্য জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর জনাব সৈয়দ আলী আহসান প্রাচীন  গেরদা মসজিদ এর স্থানে ১৯৭৮ সালে  নির্মান করেন নতুন এই মসজিদটি তবে ঐতিহাসিক গেরদা মসজিদের অংশবিশেষ আজও বিদ্যমান। এখনও পুরনো পাথরের গায়ে হাত বুলিয়ে দেখেন দর্শনার্থীরা আর ৪০০ বছরের পুরনো গেরদা মসজিদের অস্তিত্ব উপলব্ধি করেন। মসজিদের উত্তর দিকে অবস্থিত রয়েছে বেশ কিছু পুরনো কবর কবরের সামনেই রয়েছে শতবর্ষী কাঠাল গাছ। গাছটি আজও কালের সাক্ষি হয়ে জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্বকে। গেরদা গ্রামটি যেনো এক পূণ্যভূমি ছায়াশীতল গ্রামটির মায়ায় যে কেউ নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলবেন। মসজিদটির চারপাশে অসংখ্য গাছপালা রয়েছে পারিপার্শিক অবস্থা দেখে অনুমান করা যায় একদা এক সময় এখানে ঘন জঙ্গল ছিলো । মসজিদের খুব কাছেই পদ্মার একটি শাখা নদী বয়ে গেছে , ধারণা করা হয় পদ্মার নদী ভাঙ্গনের কারনে প্রাচীন গেরদা মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদ ছাড়াও এখানে হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী (রঃ) এর অনুসারী এবং তার বংশধরদের বসবাসের বাড়িও ছিলো তবে সেগুলোর কোনও চিহ্নই নেই। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন দুরদুরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনাথীরা আসেন ।

তো এই ছিলো গেরদা মসজিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আবারও দেখা হবে ফরিদপুরের ঐতিহাসিক কোনও স্থানে। ফরিদপুরকে দেখুন ফরিদপুরকে জানুন। ফরিদপুর সিটি পেজ এবং ফরিদপুর লাইভ গ্রুপের সাথেই থাকুন।

কিভাবে যাবেন:

ঢাকা ও অন্যান্য জেলা শহর থেকে বাস, ট্রেনযোগে প্রথমে আসতে হবে ফরিদপুর শহরে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় ,রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, অথবা নতুন বাসস্ট্যান্ড , অথবা রেল স্টেশন থেকে ইজিবাইক রিজার্ভ করে সরাসরি বায়তুলআমান বাজার হয়ে  ঢোলসমুদ্রের সামনে দিয়ে লাল খার মোড় পার হয়ে চলে যাবেন গেরদা গ্রামে অবস্থিত গেরদা মসজিদে। বলে রাখা ভালো রিজার্ভ না করে গেলে ফেরার সময় ইজিবাইক পাওয়া দুস্কর হতে পারে ।

কোথায় থাকবেন:

ফরিদপুর শহরেই রয়েছে বেশকিছু আবাসিক হোটেল তবে কোনও তারকা হোটেল নেই, আবসিক হোটেল এর মধ্যে রয়েছে হোটেল র‌্যাফেলস ইনন, হোটেল লাক্সারী, হোটেল রাজস্থান,হোটেল পদ্মা, জে.কে ইন্টারন্যাশনাল আমাদের ওয়েবসাইটেই হোটেল এর ফোন নাম্বার পেয়ে যাবেন।

কোথায় খাবেন:

ফরিদপুর শহরে রয়েছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট পছন্দমতো যেকোনও একটিতে গিয়ে আপনার খাবার গ্রহন করতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইটেও রেস্টুরেন্ট তালিকা দেয়া আছে।

ঐতিহ্যবাহী খাবার:

ফরিদপুরে এলে অবশ্যই যে খাবারগুলো পরখ করে দেখবেন তেতুল তলার খোকা মিয়ার ছানার রসগোল্লা, বাগাটের দই, স্টেশন রোডের লুচি,

তথ্যসূত্র: ঐতিহ্যে লালিত ফরিদপুর গ্রন্থ

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *