টাইম কল

Page Visited: 41
61 Views
টাইম কল :
একটি ‘রাস্তার পানির কলের’ নমুনা ছবি যুক্ত করলাম , অনেকটা এরকম দেখতে কিউট পানির কল ছিল ফরিদপুর শহরে।খাবার পানি ( Drinking Water ) সরবরাহ করা হতো এই কল থেকে।এই পানির কলের ইংরেজী নাম’ Bronze Public Street Tap’. ফরিদপুর শহরে পানির কলগুলো রাস্তার পাশে/ ধারে অবস্থিত ছিল বিশেষভাবে ঝিলটুলী এলাকায়।
 
কলগুলো স্থাপিত হয়েছিল বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের প্রকল্পের আওতায় আনুমানিক ১৯০০ -১৯১৫ সনে, ফরিদপুর পৌরসভার অধিনে অম্বিকা চরন মজুমদারের উদ্যোগে ।কেন আমি ১৯০০-১৯১৫ সন বেছে নিলাম তার পক্ষে যুক্তি হিসাবে উকিপিডিয় – অম্বিকাচরণ মজুমদার -এর কিছু অংশ এখানে তুলে ধরলাম,
“অম্বিকাচরণ মজুমদার একটানা ২০ বছর ফরিদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি ফরিদপুরের অনেক উন্নয়ন করেন। ফরিদপুরকে গড়ে তুলেন নিজের মত করে। পৌরভবন, রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ ও পৌরসভায় পানির ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করেন। আর এজন্য তাকে বলা হয় আধুনিক ফরিদপুরের রূপকার। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার ঢাকা বিভাগের পৌরসভা প্রতিনিধি। ফরিদপুর পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখতে এসে তৎকালীন বাংলার গভর্নর স্যার জন উডবান তাকে ‘Grand Oldman’ উপাধি দেন। তিনি দীর্ঘ দিন ফরিদপুর জেলা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এক সময় তিনি ফরিদপুর লোন অফিসের পরিচালক ছিলেন। তিনি ছিলেন ফরিদপুর টাউন থিয়েটারে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।” ফরিদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সনে।অম্বিকাচরণ মজুমদারের জন্ম-১৮৫১ মৃত্যু-১৯২২, তিনি শহরের বেশীরভাগ উন্নয়নমূলক কাজগুলো করেন বৃদ্ধ বয়সে, তার মধ্যে একটি রাজেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠা ১৯১৫ সনে। যদিও কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজটি শুরু করেন অনেক আগে তবে সরকারি জমি কলেজের নামে বরাদ্দর জটিলতায় কয়েক বছর পার হয়ে যায়।
পৌরসভার পুরনো নথি থেকে পানির প্রকল্প কত সনে হয়েছিল তা জানা যেতে পারে, যদিও এত পুরনো নথি খুঁজে পাবার সম্ভবনা কম।
আমি ফিরে যাই আমার দেখা ‘রাস্তার পানির কলে’। কলে
সকালে এক ঘন্টা ও বিকালে এক ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হতো।কলে পানি আসার আগেই কল তলার সানবাধানো মেঝেতে(আনুমানিক ৩ফুট x ৩ফুট সানবাধানো মেঝে)এবং এর আশেপাশে পানির কলশি (পিতল/সিলভার/ মাটির তৈরি)এনে জড়ো করে রাখা হতো। সাধারনত বাড়ীর মেয়েরা বা ঝিয়েরা এ কাজটি করতো। পানি আসার আগ পর্যন্ত গল্পগুজবে মেতে থাকতো পানি এলে কে কার আগে পানি নেবে এই যুদ্ধে নেমে যেত। যুদ্ধাটা বেশীরভাগ সময় ঝগড়ায় রুপ নিত, ঝগড়ার একটি সাধারন সংলাপ ফরিদপুরের তখনকার ভাষায়, “আমি তোর আগে এইখ্যানে কলশি রাখছি তুই আমার কলশি সরাইয়া পানি ভরতেছিস ক্যান, তোর আসপদ্দাতো কমনা, কলশি সরা আমারে পানি ভরতে দে”।আমি ষাট দশকের কথা বলছি, তখন বাসারাড়ীতে সরাসরি পানি সরবরাহের কোন ব্যবস্থা ছিল না।১৯৬০ সনে আমার বয়স আট বছর। ছোট বেলার অনেক স্মৃতি পরিষ্কার মনে আছে , অনেককিছু ঝাঁপসা এবং কিছু একেবারেই হারিয়ে গেছে। এ রাস্তার কলগুলির তখনকার অবস্থান যতটুকু পরিষ্কার মনে আছে তার বর্ননা নীচে : ১.বর্তমান দুর্নিতি দমন অফিসের উত্তর কোনায়, ২. চৌরঙ্গি বিল্ডিংয়ের পূবে শিক্ষাঅফিসের উল্টোদিকে,৩. ইশান ভবনের উল্টোদিকে, ৪. বর্তমান অপসোনিনের স্থাপনার দক্ষিণ কেনায়, ৫. পুরাতন পাওয়ার হাউজের কমপাউন্ডের পুর্ব -দঙ্গিন কোনায়। আরো অনেক জায়গায় কল ছিল নিদিষ্টভাবে মনে করতে পারছি না, ঝিলটুলির প্রায় সব রাস্তার পাশে কল ছিল, পূর্ব খাবাশপুর ও আলীপুরে ছিল কিনা মনে করতে পারছি না। কমলাপুর, টেপাখোলা , লক্ষীপুর ও গোয়ালচামটে ছিল না।
 
তবে এগুলো অম্বিকা ময়দানের আশেপাশে রাস্তাতে বেশী ছিল। কারণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের মূল স্থাপনাটি ছিল অম্বিকা হলের গা ঘেসে পশ্চিমে। এখানে একটি পাম্প ঘর , স্টিলের ওভারহেড ট্যাঙ্ক , তিনটি ঢালাইকরা পানির চেম্বার ও দুটি কূপ ছিল যেখান থেকে মাটির নীচের পানি তুলে ওভারহেড ট্যাঙ্কের মাধ্যমে রাস্তার কলে পানি সরবরাহ করা হত। কূপ দুটির একটি ছিল স্থাপনার ভিতরে অন্যটি অম্বিকা ময়দানের মাঠে পূর্বদিকের দেয়াল ঘেসে মাঠের মাঝামাঝি অবস্থানে।পানি সরবরাহ প্লান্টের পানি ফিলট্রেশন ইউনিটটি ছিল কিছুটা দুরে ঝিলটুলী সেনালী বাংকের দঙ্গিনে বর্তমান পানির পাম্পের কাছাকাছি। গুগুল ম্যাপে নেয়া একটি স্নাপসট এই পোষ্টে যোগ করলাম অম্বিকা ময়দানের আশেপাশের সব স্থাপনার অবস্থানের স্বচ্ছ ধারণা দেবার জন্য। একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে অম্বিকা ময়দান ও হল, ব্যক্তিমালিকানাধিন বিদুৎ কেন্দ্র ও তার অফিস , পানি সরবরাহ প্লান্ট , বিশাল পুকুর সবকিছুএকটি একক সমন্বিত পরিকল্পনা (Single integrated plan) ও তার বাস্তবায়নের ফসল । এই কমপ্লেক্স বাস্তবায়নে জলাঞ্জলি দিতে হয় ঝিলটুলি ঝিলের মাঝের অংশকে।এরপরে ঝিলটুলির ঝিলের বিরর্তন নিয়ে একটি পোষ্ট দেবার ইচ্ছ আছে।আরো অনেক অনেক মজাদার বিষয় পোষ্ট দেব এক এক করে।নুতন প্রজন্মের ফরিদপুর শহরবাসীর কাছে আমার অনুরোধ পোষ্ট সংশিষ্ট কোন প্রশ্ন থাকলে তা করতে, তথ্য (যেমন পুরনো ছবি,বয়স্ক কারো অভিজ্ঞতা ইত্যাদি) থাকলে তা শেয়ার করতে।ফরিদপুর শহর অনেক পুরনো শহর এবং এর ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ, কিন্তু তেমনভাবে ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়নি, ঐতিহ্য সংরক্ষন করা হয়নি ও হচ্ছে না।নবীনেরা এগিয়ে এলে অনেককিছুই উদ্ধার করা সম্ভব।
অন্তত একটি হলেও রাস্তার কলের সংরক্ষন করা উচিত ছিল, আরো একটি ঐতিহ্য হারিয়ে গেল!
চলবে…
ফরিদপুরকে দেখুন,ফরিদপুরকে জানুন।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *