ফরিদপুরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার ইতিহাস

Page Visited: 190
159 Views

আজ জানতে পারবেন ফরিদপুরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার ইতিহাস, আরও জানতে পারবেন ফরিদপুরের বিমান উঠানামার রানওয়ের বর্তমান অবস্থা।

আজ থেকে ৫৫ বছর আগে ফরিদপুর এর আকাশে ঘটেছিলো মর্মান্তিক এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা। সে হেলিকপ্টারে ২৪ জন যাত্রীর মধ্যে ২৩ জনই মারা যায় তবে আলৌকিকভাবে বেচে গিয়েছিলো ১জন ব্যক্তি | স্বাধীনতার আগে যখন পূর্ব পাকিস্তান নাম ছিলো তখন আমাদের ফরিদপুর গোয়ালচামট এলাকায় অবস্থিত হেলিপোর্ট এ নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করতো। যাত্রীদের থাকার জন্য পাশেই গড়ে উঠেছিলো  হোটেল যার নাম ছিলো ‘ প্রান্তিক’ সেখানে থাকার সুবিধা ছিলো। বর্তমানে সেটি র‍্যাব ৮ এর ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৬৬ সালের ২রা ফেব্রুয়ারিতে একটি পরিবহন হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে ক্রুসহ ২৪ জন যাত্রী নিয়ে ফরিদপুর এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়, দিনটি ছিলো বুধবার দুপুর ২টা ২৩  হেলিকপ্টারটি ফরিদপুর হেলিপোর্ট হতে ৩.৭৫ মাইল দুরে তুলা গ্রাম নামক এলাকায় এসে শকুনের পাখার সাথে আঘাত লাগে, বিকট শব্দে ভেতরে থাকা যাত্রীরা আতংকিত হয়ে যায়, হেলিকপ্টার টির  ইঞ্জিন বিকল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে মাঠিতে আছড়ে পরে। ঘটনা স্থলেই ২৩ জন মারা যায় এবং অলৌকিকভাবে একজন যাত্রী আহত অবস্থায় হেলিকপ্টার থেকে বেরিয়ে আসেন। তাকে ধানক্ষেতে কর্মরত স্থানীয় কৃষকরা ১মে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান পরবর্তীতে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। সেই বেচে যাওয়া ব্যক্তির নাম এম এ মান্নান মান্নান (জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬) যিনি বর্তমানে বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তা যিনি ক্ষুদ্র-কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের  পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য।

কি ঘটেছিলো সেদিন কেমন ছিলো তার অভিজ্ঞতা জেনে নেই চলুন:

১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দুই তারিখ। সেদিন ছিল বুধবার। এম এ মান্নান, তখন আমেরিকার সাহায্য সংস্থা কেয়ারের তৎকালীন ঢাকা অফিসে চাকরী করতেন , তখন বয়সে তরুণ এম এ মান্নানকে অফিসের কাজে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো তাকে।  ওই দিন তাঁর কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বা পিআইএ তখন কিছু হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করেছিল, যা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে যাত্রী পরিবহন করতো। দুপুর দুইটা নাগাদ মি: মান্নান ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারে আরোহণ করেন। ওই হেলিকপ্টারটিতে সব মিলিয়ে ২৪ জনের মতো যাত্রী ছিল। হেলিকপ্টারটি ঢাকা থেকে প্রথমে ফরিদপুর হয়ে পরে কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা ছিলো।  তখন হেলিক্টারে করে ঢাকা হতে ফরিদপুর যেতে সময় লাগতো ২২ মিনিট এবং ফরিদপুর থেকে কুষ্টিয়ায় যেতে  ২০ মিনিট সময় লাগার কথা ছিল।

ফরিদপুরের কাছাকাছি যখন হেলিকপ্টারটি পৌঁছায় তখন ওপর থেকে বিকট আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।”মুহূর্তের মধ্যেই হেলিকপ্টারটি ঘুরতে-ঘুরতে মাটিতে পড়ে যায়। এম এ মান্নান জানান আমি তখন আল্লাহকে ডাকছিলাম আর মায়ের কথা ভাবছিলাম,” মাটিতে পড়ার পর ওই হেলিকপ্টারের মধ্যে প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। প্রাণপণ চেষ্টা করে জনাব মান্নান বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার থেকে বেরিয়ে আসেন। দুর্ঘটনার কাছেই তখন ধানক্ষেতে চাষাবাদ করছিলো কয়েকজন কৃষক, তারা আহত মান্নানকে উদ্ধার করে প্রথমে তাদের বাড়িতে এবং পরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বিদ্ধস্ত হেলিকপ্টারে থাকা ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জনই সেদিন মারা গিয়েছিলেন একমাত্র বেঁচে যাওয়া যাত্রী ছিলেন এম এ মান্নান।

অনেকটা অলৌকিকভাবে জীবিত থাকা এম এ মান্নান,  ওই ঘটনা মনে করে এখনো নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তুলা গ্রামের পাশেই ছিলো শকুনের বিল সেখানে অনেক শকুন নামতো সেই থেকে নাম শকুনের বিল। লোক মুখে শোনা যেতো হেলিকপ্টারটি নাকি শকুনের পাখার সাথে বারি খেয়েছিলো। ফরেনসিক রিপোর্টেও সে কথার সত্যতা পাওয়া যায়।  রিপোর্ট অনুযায়ী হেলিকপ্টারটির গিয়ারবক্সে তেল লিক করছিলো এবং ইঞ্জিন কাজ করছিলো না। নিহতের অনেকের কবর ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিপুর গোরস্থানে এখনও রয়েছে, কবরটিতে নিহতের নাম এবং ঘটনার সাল তারিখ উল্লেখ আছে। হেলিকপ্টার বিধস্ত হবার পর থেকে হেলিপোর্টে আর পরিবহন হেলিকপ্টার নামে নি। দীর্ঘদিন হেলিপোর্টটি পরেছিলো পরবর্তীতে ট্রাক স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হতো বর্তমানে আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ হয়েছে তবে চালু হয়নি। হেলিপোর্ট এর পাশেই আজও কালের সাক্ষি হয়ে দারিয়ে আছে একটি ওয়ারলেস, তবে সেটি ঝুকিপূর্ণভাবে রয়েছে যেকোনো সময় ভেঙে পরতে পারে।

 

আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ হলো এতো আগের প্রতক্ষদর্শী যারা ছিলেন তাদের খুজে বের করা তখন যে বাড়িতে আহত ব্যাক্তিটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তাদের খুজে বের করা। শুরু হলো আমাদের অনুসন্ধান

খুজতে খুজতে আমরা তুলাগ্রাম

You may also like...

1 Response

  1. ধন্যবাদ এডমিন ভাইকে। ছোট বেলা থেকেই শুনতাম ফরিদপুর নাকি প্লেন উঠা নামা করতো, কিন্তু আসলে কতটা সত্য জানা ছিল না। আজ আসল ঘটনা জানতে পারলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *