ঈশান চন্দ্র ঘোষ
20/07/2023
Page Visited: 110
131 Views
ঈশাণ চান্দ্র ঘোষ এবং ঈশান চন্দ্র স্টেট যা বর্তমানে খরসূতি উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিতঃ
পাক ভারত উপমহাদেশে তৎকালীন সময়ে যে সকল মহাপুরুষ ছিলেন তার মধ্যে ঈশান
চন্দ্র ঘােষের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযােগ্য। ঈশান চন্দ্র ঘােষকে মূলত একজন শিক্ষাবিদ
হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে, এই মনিষীকে শুধু মাত্র শিক্ষাবিদের গন্ডীতে আবদ্ধ রেখে তার বহু মূখী প্রতিভাকে শুধুমাত্র অবমূল্যায়ন করার অপপ্রয়াস চালানো ছাড়া আর কিছু নয়।
কেননা বহু ভাষাবিদ ঈশান চন্দ্র ঘােষ শুধুমাত্র শিক্ষাবিদই ছিলেননা, তিনি একাধারে ছিলেন,
শিক্ষক, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক দার্শনিক অপর দিকে ছিলেন, ব্যাবসায়ী ও সমাজ
সংস্কারক।
সঙ্গত কারনেই ঈশান চন্দ্র ঘােষকে মূল্যায়ন করতে হয় আমাদের অন্তদৃষ্টি দিয়ে। কেননা
তার চিন্তা চেতনা শুধুমাত্র নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ভেরতই সীমাবদ্ধ ছিলাে না, তিনি
গঠণমুলক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে সমাজকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এগিয়ে গেছেন সমাজের প্রত্যেক
শাখায়।
জন্ম পরিচয়ঃ ঈশান চন্দ্র ঘােষ ১৮৫৮ সালের মে মাসে (তৎকালীণ যশাের জেলার)
বােয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের অন্তর্গত খরসুতি জন্ম গ্রহন করেন। ৮ ভাই-
বােনের ভেতর ঈশান চন্দ্রাই ছিলেন জেষ্ঠ্য। পিতা ছিলেন একজন দরিদ্র স্বল্প বেতনের
গােমস্তা। মাত্র দশ বছর বয়সে ঈশান চন্দ্র পিতৃহারা হন এবং মা কালীতারা দেবী কন্যা পুত্র
সন্তানদের নিয়ে দারুণ মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন।
পরিবারিক ইতিহাসঃ ঈশান চন্দ্র ঘােষের পারিবারিক ইতিহাস তেমন কিছু পাওয়া যায় না ।
তবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সুবােধ চন্দ্র সেনগুপ্ত থেকে জানা যায়, ঈশান চন্দ্রের প্রায় ছয় সাত
পুরুষ খরসূতি গ্রামেই বসবাস করতেন।
শিক্ষাজীবনঃ ইশান চন্দ্র ঘোেষ ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে কৃতিত্বের সাক্ষর
রেখেছেন। গ্রামের পাঠশালায় শিক্ষাবন্ত হলেও পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি গ্রাম
ছেড়ে একই থানার বঙ্গেশ্বর ফ্রি মাইনর স্কুলে ভর্তি হন এবং পরবর্তী ১৮৭৭ এ ফরিদপুর
জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। উচ্চ শিক্ষা লাভের
আশায় পরবর্তীকালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে কোলকাতার মেট্রোপলিটন ইনষ্টিটিউশন থেকে
বৃত্তি সহ এফএ এবং জেনারেল ইনষ্টিটিউশন থেকে বিএ পাশ করেন। ১৮৮২ সালে
কৃতিত্বের সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ করে।
বিবাহঃ ঈশান চন্দ্র ঘােষ ১৮৭৪ সালে মাত্র পনেরাে বছর বয়সে বিয়ে করেন। বঙ্গেশ্বরদী
গ্রামের গঙ্গাধর নাগের প্রথমা কন্যা শশীমুখির সঙ্গে ইশান চন্দ্রের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
কর্মজীবনঃ ঈশান চন্দ্রের কর্মজীবন সম্পর্কে বলতে গলে তার জীবনকে কয়েকটি ভাগে ভাগ।
সাহিত্যিক ঈশান চন্দ্র।
করতে হয়, তা হলাে শিক্ষক ইশান চন্দ্র, ব্যবসায়ী ঈশান চন্দ্র অপরদিকে শিক্ষাবিদ,
হিসেবে বেছে নিলেন এবং ১৮৮২ সালের প্রথম দিকে নড়াইল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক,
ঈশান চন্দ্র ও সমকালীন মূল্যায়নঃ ঈশান চন্দ্র শিক্ষা শেষে প্রথমেই তিনি শিক্ষকতা পেশা।
পরবর্তীতে কিছু কাল বােয়ালমারী জজ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক হিসেবে যােগদান করলেও কিছুদনি পর তিনি কোলকাতায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিভাগের ডেপুটি স্কুলে ইন্সপেক্টর পদে চাকরি গ্রহণ করেন। অতঃপর প্রায় ৭ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তে ঈশান চন্দ্র যিনি প্রথম বাঙালি কোলকাতা ডেভিড় হেয়ার স্কুলের প্রধান
শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯২১ সাল থেকে ১৯২৫সাল পর্যন্ত ঈশান চন্দ্র নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সভাপতি
হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পালন ছাড়াও ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সংবাদপত্রে লেকালেখি নিয়ে
দারুণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি সংস্কৃতি, পালি, হিন্দি, ইংরেজী ভাষা ছাড়াও এ সকল ভাষা
সাহিত্যের দক্ষতার পরিচয় দেন।
অবদানঃ সমাজ ও সাহিত্যে ঈশান চন্দ্র ঘােষের অবদান অপরিসীম। সমাজ উন্নয়নের জন্যে
তিনি নানবিধ কাজ করেছেন। সুদূর কোলকাতায় থেকেও তার জন্ম মাটি খরসূতিকে
কখনােই তিনি ভুলতে পারেননি। এ গ্রামেই তিনি প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন মায়ের নাম
কালীতারা দাতব্য চিকিৎসালয়, পিতার নামানুসারে খরসূতি চন্দ্র কিশাের বহুমুখী উচ্চ
বিদ্যালয়। পানীর জলের জন্য ৪টি দিঘী, বেশ কিছু কালভার্ট, পুর নির্মাণ করেন। শুধু
খরসূতিই নয় উপজেলার বঙ্গেশ্বরদীতে স্ত্রীর নামানুসারে শশীমুখি দাতব্য চিকিৎসালয়’
স্থাপনসহ নির্মাণ করেন বেশ কিছু রাস্তা। সমাজ উন্নয়নের পাশাপাশি ঈশান চন্দ্র ঘােষ বাংলা
সাহিত্যেও বিশেষ অবদান রাখেন। যার মধ্যে রয়েছে নতুন শিশুপাঠ’ ‘হিতােপদেশ’
‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ ‘মহাপুরুষ চরিত’ ইত্যাদি। এ সকল গ্রন্থ তৎকালীন সময়ে প্রাথমিক
ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগে বিশেষভাবে পাঠ্য ছিলাে। জানা যায়, এ সময় তিনি ইংরেজিতেও
বেশ কিছু পাঠ্য পুস্তক রচনা ও সম্পাদনা করেন ।
উল্লেখিত গ্রন্থসমূহ ঈশান চন্দ্র ঘােষের মূলকীর্তি নয়; তার মূলকীর্তি হলাে পালি ভাষা থেকে
‘জাতক মালার’বঙ্গানুবাদ। জাতক’ আজ বাংলা সাহিত্যের দূর্লভ একটি গ্রন্থ। ঈশান চন্দ্র
ঘােষ সাহিত্যের পাশাপাশি কাব্য চর্চায় গভীর নিমগ্ন ছিলেন। তাঁর অসংখ্য কবিতা বিভিন্ন
গ্রন্থে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
মূল্যায়নঃ ঈশান চন্দ্র পাক-ভারত উপমহাদেশে একজন গুণী বুদ্ধিজীবিদের তালিকায় শীর্ষ
স্থানীয় । তাঁর জীবন পঞ্জিসহ বিভিন্ন লেখকের লেখা থেকে এরূপ প্রমাণ মেলে। নেতাজী
সূভাষ চন্দ্র বসু, সুবােধ সেনগুপ্ত , মিঃ জেমসসহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা ছিলাে
গভীর।
শেষ জীবনঃ দীর্ঘকায়, শীর্ণ শরীরের অধিকারী এই মহান ব্যক্তিত্ব প্রথম জীবনে দারিদ্রতার
ভেতর থেকে আসলেও শেষ জীবনে অগাধ সম্পদ রেখে মাত্র ৭৭বছর বয়সে ১৯৩৫ সালের
২৮ অক্টোবর দেহত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, পশ্চিম বাংলার মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ঈশান চন্দ্রের পুত্র প্রফুল্ল ঘােষের কন্যা শ্রীমতি
বাসন্তি ঘােষকে বিয়ে করেন।
লোকেশানঃ খরসূতি চন্দ্রমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,বোয়ালমারী, ফরিদপুর।
Recent Comments