অদেখা চক বাজার ফরিদপুর, প্রথম পর্ব : কুটিবাড়ি

Page Visited: 24
82 Views

আমার দেখা চকবাজার :

প্রথম পর্ব : কুটিবাড়ি

প্রথমেই সরাসরি চকবাজার প্রসঙ্গে না গিয়ে ফরিপুরের ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করছি। ইংরেজী তেরো শতকের সুফি সাধক শাহ শেখ ফরিদউদ্দিন (ফরিদউদ্দিন মাসুদ) -এর নামে ফরিদপুরের নামকরন। তার মানে তেরো শতকে এখানে জনপদ (Township) ছিল যার কারণে শেখ ফরিদ এখানে এসেছিলেন সুফি দর্শন ও ধর্ম প্রচার করতে।

তখনকার টাউনশিপের বৈশিষ্ট ছিল আলাদা , যেমন একশ বছর আগের ফরিদপুর আর এখনকার ফরিদপুর আকাশ পাতাল পার্থক্য, এমনকি পঞ্চাশ বছরেই অনেক তফাৎ।তাই ৬শ বছর আগের শহরের কোন বাস্তব (Tangible) নির্দশন খুঁজে পাওয়া দূষ্কর। পনেরো শতকে সুলতানদের শাষন আমলে সুলতান জালালউদ্দিন শাহ এখানে একটি মুদ্রার(Coin) কারখানা স্থাপন করেন,তখন এখানকার নাম ছিল ‘ফতেহাবাদ’।জানিনা সেই মুদ্রা( স্বর্ন মুদ্রা- Gold coin) তৈরির Legacy থেকেই বর্তমান স্বর্ণকার পট্টির সৃষ্টি কিনা? আমার ছোটবেলা থেকে একটা জিজ্ঞাসা , কি কারনে এত বড় স্বর্ণকার পট্টি গড়ে উঠেছিল ১৫০/ ২০০ বছর আগে? বড়দের মুখে শুনেছি তালমার ওদিকে সোনার কাজে দক্ষ অনেক পরিবার বাস করতো, তাদের কারনেই সোনার ব্যবসায়ীরা এখানে সোনা পট্টি গড়ে তুলে ।এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।সোনার কাজ অনেক সুক্ষ ও স্কিলফুল, চিকন নলে মুখ দিয়ে ফুদিয়ে আগুনের শিখাকে নিয়ন্ত্রণ করে ডিজাইন করতো। এখন আর সে বলাই নেই সবকিছু হয় মেশিনে । তখন স্বর্নকারকে ‘স্যকরা’ বলা হত।আগেকার দোকানগুলো এত ডেকোরেটিভ ছিল না, এত সাইন বোর্ডর বাহার ছিল না । সাদামাটা লোহার সিঁকওয়ালা টিনেরচালার দোকান, টিপিকাল লুক, এখনকার মত কাচের বড় বড় শোকেস ছিল না যেহেতু গহনা তৈরি হতো ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী আগাম নির্দেশে।ফটোএলবামের মত রড়সাইজের ডিজাইনের বই দেখে গহনার অডার করা হতো, কোন কোন ক্ষেত্রে তৈরি গহনা দেখিয়ে বলতো “দাদা এই ডিজাইনের গহনা গড়ে দিবেন”। বাড়ীর গিন্নিরা দোকানে যেতনা বরং স্যকরা বাড়িতে গিয়ে অডার নিতো এবং তৈরির পর বাড়িতে পৌছে দিত।বাড়িতে ডেলিভারির সময় জামার সাইট পকেট থেকে কাপড়ে মোড়ানো গহনা নরম হাতে যত্নসহকারে বের করে বলতো,”দেখেনতো দিদি কেমন হইছে”। এখনও আমার কানে ভাসে মা বলতো, “বাবা বাইরে গেলে অনিল স্যকরার দোকান ঘুরে আসবি, বলবি কাকা,মা আপনাকে দেখা করতে বলেছে”।তখনকার ক্রেতা ও বিক্রেতার যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল তা এখনকার আর্থসামাজিক অবস্থায় বোঝানো কঠিণ।আমাদের বাসার কাছে একটা মুদির দোকান ছিল দোকানটা তার বাড়ির সাথে লাগোয়া অতি বিনয়ি লোক, একদিন ওনাকে বললাম, কাকা আমি আপনার ছেলের বয়সি আপনি আমার সাথে কাচুমাচু হয়ে কথা বলেন কেন? বললো “তুমি আমার খদ্দ্যৈর (খরিদদার), খদ্দ্যৈর হলো লক্ষী”।ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে তা হল, Customer is always right । দেশর বর্তমান পরিস্থিতি, Seller is always right.এখনো স্বর্ণকার পট্টিতে পুরনো আদলের কিছু দোকান আছে।দুটি পুরনো দিনের দোকানের ছবি যুক্ত করলাম(গুগল স্টির্ট ভিঊ থেকে নেয়া), দোতলা ও একতলা টিনের চালার ঘর।দোতলা ঘরের নীচ তলা দোকান এবং উপর তলা বাসা, দোকানে এখন লোহার স্টীল সাটার যা আগে ছিল লোহার গাড়দ ও কাঠের ভাজ করা কাঠের পাল্লা যেমনটি এখনও ধরে রাখা হয়েছে একতলা দোকানে।মুজিব সড়কে বর্তমান বাটা ও উল্টোদিকে ফরিদপুর ম্যানসন নামে একটি সুন্দর বিল্ডিং ছিল, এখান থেকে শুরু হয়ে ফায়ার ব্রিগেট অফিস পর্যন্ত রাস্তার দুইধার গায়ে গায়ে লাগানো দোতালা ও একতলা টিনের চালার দোকানের মিশ্রনে সাজানো ছিল এই স্বর্ণকার পট্টি।আমাদের সময় কিছু অন্য ব্যবসার দোকান ʼকাবাব মে হাড্ডিʼ হিসেবে ঢুকে গিয়েছিল এই পট্টিতে।তার প্রধান করণ দেশভাগের পর কিছু দোকনি ভারত চলে যাওয়ায় ঐ গ্যাপ অন্য প্রতিষ্ঠান পুরন করে ,তার সংখা বেশী ছিল না।বর্তমানে অন্য ব্যানিকজিক প্রতিষ্ঠান অতি মাত্তায় বেড়ে যাওয়ায় স্বর্ণকার পট্টির আদি আবহ মলিন হয়ে গেছে ।

এই পট্টিতে কর্মকারদের(কামারের) কিছু দোকন ছিল যা বিলুপ্ত।ফরিদপুর ম্যানসনের পরই পূবে তিন চারটা একসারিতে সাজানো কর্মকারের(Blacksmith) দোকান ছিল, অনেকে ঐ অংশকে কর্মকার পট্টি বলে আখ্যায়িত করতো। মাটির মেঝে তিন দিকে টিনের দেয়াল টিনের চালা সামনে টিনের ঝাপসহ বেশ রড় দোকান।কয়লার আগুনের তাপে(চামরার তৈরি এয়ার বোলোয়ার বাতাস দিয়ে আগুন প্রজ্জলিত করে) গরম লাল লোহাকে বড় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দা,বটি,কুলাড়,শাবল,খোন্তাসহ সব ধরনের লোহার সামগ্রী তৈরি করতো এই কর্মকাররা।কামারের কাজটা খুবই পরিশ্রমের কাজ, খালী গায়ে ধুতি কাছা দিয়ে আগুনের সমনো বসে হাতুরি পেটিয়ে গরম লোহাকে সাইজ করা সত্যই অনেক পরিশ্রমের কাজ।কামারের হাতুরির আওয়াজ অনেকটা ঘন্টার শব্দের মত, শব্দদূষনের মধ্যে পরে না (আমার মতে) কারণ এ শব্দ এখনকার গাড়ি চলার ও হর্ণের আওয়াজের মত বিরক্তিকর ছিল না।

 

আবার ফিরে যাই স্বর্নকারে, এদের আর একটি ব্যবসা আদি কাল থেকে চলে আসছে, তা হলো গহনা বন্ধক রেখে টাকা ধার দেওয়া।ইংরেজ আমলে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুরের প্রথম ব্যাংক ‘ফরিদপুর লোন অফিস’ (বর্তমান ভূমি অফিস, দূনীতি দমন কমিশনের ঊত্তরে ), ম্যানেজার শিবেন ভাদুরি ( সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি)।বেশ ছোটবেলায় কথা, পাড়ার লোকেরা বলাবলি করছে , ‘লোন অফিসের লালবাতী জ্বলে গেছে’। ছোট মানুষ জানতে চাইলাম লালবাতী জ্বলে গেছে মানে কি? বললো ব্যাংকের টাকা না থাকলে লালবাতী জ্বলে যায়। বললাম টাকা না থাকার সাথে লালবাতী জ্বলে যাবার সম্পর্ক কি ? বললো ব্যংকের এ অবস্থা হলে হেরিকেন জ্বালিয়ে লাল রংয়ের পাতলা কাগজ দিয়ে মুড়ে বাঁশের আগায় ঝুলিয়ে ব্যাংকের সামনে বেধে দেওয়া হয়, যা দেখে লোকেরা বুঝতে পারে যে এ ব্যংকে টাকা নেই। এখন বুঝি লালবাতী জ্বলে যাওয়া মানে দেউলিয়া (Bankrupt) হয়ে যাওয়া। লোন অফিসতো দেউলিয়া আর লোন দিতে পারবে না তবে উপায় – গহনা বন্ধক রেখে স্যাকরার কাছ থেকে টাকা ধার নেয়া অথবা কাবুলিওয়ালা / পাঠান -এর কাছ থেকে ধার নেয়া এ ছাড়া উপায় কি? এই উপমহাদেশে কাবুলিওয়ালা/পাঠানরা টাকা ধার দেয়ার কারবার করতো।ফরিদপুরেও এদের দেখেছি ১৯৬৭/৬৯ পর্যন্ত।পূর্ব খাবাসপুরের দিকে থাকতো।এদেরকে মজা করে বলতাম, “ঝুট কিউ বলতা হু ” জবাবে বলতো, “পাঠান কভি ঝুট নেহি বলতা “, এর পর বলতাম ,”সুদ কিউ খাতা হায়” ওরা বলতো,”ইয়ে তো মেরা ধান্ধা হায়”।কাবুলিওয়ালাদের ধার নিয়ে অনেক গল্প কাহিনী আছে এ উপমহাদেশে।এদের কথা লিখতে গিয়ে অনেক ছোট বেলার আর একটি স্মৃতি জেগে উঠলো, কোর্ট প্রাঙ্গনে উকিল বারের ঐদিকটায় ইরাণী মহিলারা চশমা,আংটি,ও আংটির পাথর বিক্রী করতো।চশমাগুলো বেশীর ভাগই গান্ধী-চশমা আদলের, ক্রেতা একটা একটা করে চশমা চোখে দিয়ে পরখ করে কিনতো।এরা অনেটা যাযাবরের মত এক যায়গা/শহরে বেশীদিন থকতো না, এরা ইরানী যাযাবর গোত্রের (Persian Gypsy tribe ) বলে আমার ধারনা ।এদেরকে বেশীদিন পাইনি।কথায় কথায় ইতিহাস থেকে অনেকদুর চলে এসেছি, ফতেহাবাদ(আদি ফরিদপুর) ১৫৩৮ সন পর্যন্ত বেঙ্গল সুলতান শাষনের অধিনে “মুদ্রার শহর” হিসেবে বলবত ছিল।

আইন-ই-আকবরী’ (মোগল সম্রাট আকবরের শাষন ব্যবস্থার উপর লেখা{ফার্সিতে লেখা} একটি Documentary বই, লিখেছন আকবরের রাজসভার নবরত্নের এক রত্ন আবুল ফজল- এ বইটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম) -তে ফতেহাবাদকে ʼহাভেলি মহল ফাতেহাবাদʼ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। সুলতান শাষন আমলে ফরিদপুরের আদিনাম ফতেহাবাদ আর মোগল আমলে হাভেলি মহল ফতেহবাদ। আকবরের আমলে ফতেহাবদের সাথে হাভেলি মহল জুড়ে দেবার কারণ ? এবার আসি হাভেলি শব্দের অর্থ কি?

The word haveli is derived from Arabic hawali, meaning “partition” or “private space”, popularised under the Mughal Empire, and was devoid of any architectural affiliations. Later, the word haveli came to be used as a generic term for various styles of regional mansions, manor houses, and townhouses found in the Indian subcontinent.

 

মোগলদের হাভেলির অর্থ বিভাজন বা আড়াল করা দেয়াল, আর হাভেলি মহল – এর অর্থ বিভাজনে তৈরি ব্যক্তিগত স্থান \ মহল, এক কথায় অন্দর মহল। বিভাজনে তৈরি ব্যক্তিগত স্থান নিশ্চই সোনার করুকার্যে অলঙ্কৃত করে গড়া এবং ব্যক্তিগত মহলে যে রমনিরা থাকতো তাঁরাও সোনার গহনায় সজ্জিত থাকতো। আমি ফতেহাবাদ নামের সাথে বিশেষণ হিসাবে হাভেলি মহল যোগ করার মধ্যে স্বর্ণকারের কারুকার্যের (Goldsmith’s craftsmanship) ঘ্রান পাচ্ছি।আমার ধারনা ঐ সময় এই জনপদের কোন বিশেষ গোষ্টি স্বর্নকারের কারুকার্যে পারদর্শী ছিল। বাংলার একটি ক্ষুদ্র জনপদের নাম ‘আইন-ই-আকবরী’ এর মত প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া মানে এখানে অসাধারন একটা কিছু ছিল যা সুলতান ও মোগল উভয় সাম্রাজ্যকে আকৃষ্ট করে। আইন-ই-আকবরী’ পুরো বইটা পড়তে পারলে হয়তো উত্তরটা পাওয়া যেত।

ইংরেজ শাষন আমলে ফরিদপুরের প্রসাশনিক গোড়াপত্তন ১৭৮৬ সনে ঢাকা জেলার অধিনে আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট (ঢাকার মহকুমা )হিসেবে Dacca Jalalpur নামে। ফরিদপুর জেলা নামে পূনাঙ্গ জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠা ১৮১৫ সনে ( কারো কারো মতে ১৮০৭ সনে)।ফরিদপুর সদর, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ি), গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর এই চার মহাকুমা নিয়ে ফরিদপুর জেলার সৃষ্টি। মহাকুমার নাম গোয়ালন্দ ,তবে প্রসাশনিক কাজ পরিচালিত হতো রাজবাড়ির থেকে। ১৯৭৭ সনে শরিয়াতপুরকে মাদারীপুর থেকে পৃথক করে শরিয়াতপুর মহকুমার সৃষ্টি। ১৯৮৪ সনে এই পাঁচটি মহকুমাকে আলাদা পূনাঙ্গ জেলায় পরিণত করা হয়। এ কারণেই বর্তমান ফরিদপুর , রাজবাড়ি, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরিয়াতপুর জেলাকে একত্রে ‘বৃহত্তর ফরিদপুর’ নামে গন্য করা হয়।

ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়কের আদি ইতিহাস অনেকের জানা নেই।এই সড়কের আদি নাম ‘যশোর রোড’, পাকিস্তান আমলে এ রোডের নাম রাখা হয় ‘জিন্নাহ রোড’ তবে যশোর রোড হিসেবে বেশী পরিচিতি ছিল। এই রোডের দোকানপাটের সাইনে বোর্ডে আমরা যশোর রোডই লেখা দেখেছি।বেঙ্গল প্রসিডেনসির ১৮৭০-৭১ বার্ষিক প্রতিবদনে উল্লেখ আছে যশোর রোড়ের – যা ফরিদপুরকে কলকাতার সাথে যুক্ত করেছে যশোর ও বনগাওয়ের মাধ্যমে। বিশদভাবে বলতে গেলে ‘যশোর রোড’- ফরিদপুর প্রান্ত থেকে রোডের শুরু টেপাখোলা ঘাট থেকে( বর্তমান মুজিব সড়ক সোজা পূবে গিয়ে যেখানে টেপাখোলা লেকে মিশেছে, যদ্দুর মনে পরে ১৯৬৫/৬৭ পর্যন্ত এখানে সানবাধানো সিড়ির ঘাট ছিল যা টেপাখোলা লঞ্চ ঘাট নামে পরিচিত, ঢাকা যাবার জন্য একমাত্র অবলম্বন লঞ্চ এখান থেকে ছাড়তো দশ থেকে বারো ঘন্টা সময় লেগে যেত ঢাকা যেতে।এখানে একটা মিস্টির দোকানে স্বরের সন্দেশ পাওয়া যেত খেতে অতুলোনিয়, ১৯৬৫/৬৬ সনের দিকে ঢাকার সাথে গোয়ালন্দ – আরিচা ফেরির মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায পর লঞ্চে ঢাকা যাওয়া কমে যায়, লঞ্চ ঘাট অকার্যকর হয়ে পরে, আস্ত অস্তে মিস্টির দোকানসহ অন্যান্য অনেক দোকানকে পাত্তারা গোটাতে হয়।) যশোর রোডের রুট ম্যাপ: টেপাখোলা ঘাট – আদি আলীমুজ্জামান ব্রীজ – মধুখালী – কামারখালী – মাগুরা – ঝিনেইদহ-যশোর – বেনাপল- বনগাঁও – কলকাতা। নীচের অনুচ্ছেদে দৃষ্টি আকর্ষন করছি:

The 1860-61 Annual Report on the Administration of Bengal Presidency noted the existence of feeder roads to serve the EASTERN BENGAL RAILWAY. Annual Report of1870-71 recorded existence of seven important roads in eastern India, all basically radiating from Calcutta and connecting it with about half a dozen other nodal points. Of the seven important road systems in eastern India, three were relevant in the context of development of roads in Bangladesh. These were: (a) the Darjeeling Trunk Road linking Calcutta with Darjeeling through Berhampore, Bhagwangola, Godagari, Dinajpur and Shiliguri; (b) the Jessore Road linking Calcutta with Faridpur through Bongaon and Jessore; and (c) the Chittagong Trunk Road connecting Daudkandi, Comilla and Chittagong. Together with these three trunk roads, there was another significant road bifurcating from the Darjeeling Trunk Road at Dinajpur and going up to the BRAHMAPUTRA river.

১৭৭২ -১৯১২ সন পর্যন্ত কলকাতা ব্রিটিশ ইনডিয়ার রাজধানী ছিল । ১৮৭০ সনের দিকে ফরিদপুরকে রাজধানীর সাথে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত থেকে ধরে নেয়া যায় যে ব্রিটিশ রাজও এই জনপদকে( ফরিদপুর) গুরুত্বের সাথে গন্য করে । যশোর রোড যখন নির্মান হয় তখন মোটর গাড়ি যানবাহন হিসেবে ব্যবহার হতো না।এই রাস্তা তৈরি সে সময়ের যানবহন চলাচলের উপযোগি করে, যেমন চাকার গাড়ি হিসেবে গরু ও ঘোড়ার গাড়ি, অন্যান্য পরিবহনে যেমন পাল্কি, সাইকেল, ঘোড়া ইত্যাদ্দি।

ফরিদপুর শহরে পৌরসভার অধিনে একটি পৌর এলাকা আছে যার নাম ‘কুঠিবাড়ি কমলাপুর।আমার ধারণা কুঠিবাড়ি কমলাপুরের কিছু অতি বয়স্ক লোক ব্যতিত এই নামকরনের কারণ বলতে পারবে না।সতেরো শতকের শেষের দিকে ফরিদপুর জেলায় নীলের (Indigo) চাষ ও ব্যবসা শুরু করে একটি ব্রিটিশ/ ইউরোপিয়ান কোম্পানি। ঐ কোম্পানি এই বাড়ি/কুঠিটি নির্মান করে। বাড়িটি কুঠিবাড়ি বা নীলকুঠি হিসাবে পরিচিত । এই ‘কুঠিবাড়ি’, বর্তমান তারার মেলের রাস্তার ঐ দিকটায় অরস্থিত ছিল। আমাদের সময় কুঠিবাড়ির আশপাশ ঝোপঝাড়ে ভরা ছিল তাই ওদিকটায় লোকজনের যাতায়াত ছিল না ।নির্জন ,ঝোপঝাড়ে ভর্তি ও সাপকোপের ভয়ে সাধারনতো ওদিক কেউ যেত না, যার কারণে শহরের বেশীর ভাগ লোকেরই কুটিবাড়ি সম্পর্কে ধারণা ছিল না।আমরা জানতাম এই ঝোঁপের ভিতর একটি পুরনো নীলকুঠি/ কুঠিবাড়ি আছে। আমরা কয়েকজন মিলে দেখতও গিয়েছি , দুর থেকে ঝোপের ভিতর একটি বাড়ী আছে দেখেছি, কাছে গিয়ে দেখিনি। বাড়িটি এখন আর নেই, ভেঁঙ্গে ফেলা হয়েছে। এটা একটা ঐতিহাসিক স্থাপনা যা অবশ্যই সংরক্ষন করা উচিত ছিল। অন্য জেলার নীলকুঠি গুলি সংরক্ষন করা হয়েছে।ঝিনাইদহ দৌলতপুর ও মেহেরপুর নীলকুটি বাংলাদেশ প্র্ত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করে। নীলফামারী জেলার নামকরন নীল চাষ থেকে, নীলকুঠির স্থাপনাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় এখনও বিদ্যমান। পত্নতাত্বিক অধিদপ্তর এগুলো নথিভুক্ত করছে কিনা জানা নেই ।এবার ইতিহাসের দিকে তাকাই , প্রথমে আসি নীল(Indigo) কি ? নীল একটি ডাই (Dye) , আমরা যেমন চুলে ডাই করি নীলও এরকম একটা Dye যা সাধারনত কাপড়ে/ সুতোয় রং(Colour) করতে ব্যবহার করা হতো। নীল এক ধরনের উদ্ভিতকে প্রক্রিয়াজাত করে প্রস্তুত করা হত। এই উদ্ভিত চাষই নীল চাষ নামে পরিচিত। নীল গাছের একটি ছবি যুক্ত করলাম। সতেরো ও আঠারো শতকে ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের সময় মিলের কাপড়ে রং করার প্র্রয়োজনে নীলের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়। আর এই চাহিদা মেটাতে ইউরোপিয় ব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকের সহযোগিতায় অবিভক্ত বাংলার বেশ কিছু জেলায় নীল চাষ শুরু করে। বাংলাদেশের নীলফামারী সহ বৃহত্তর রংপুর জেলা, যশোর,কুষ্টিয়া, পাবনা ,ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও ফরিদপুর জেলায় নীল চাষ শুরু হয়। ফরিদপুর জেলায় ৫২ টি নীলের কারখানা ছিল, মিরগন্জে একটি বড় কারখানা ছিল এবং Dunloff নামের এক ব্যক্তি কোম্পানীর প্রধান ম্যানেজার ছিলেন তিনি বেশীর ভাগ সময় মিরগন্জে থাকতেন । আমার ধারনা ফরিদপুর শহরের কুঠিবাড়িটি Dunloff সাহেবের অফিস কাম বাসা ছিল অথবা শুধুই বাসা বা বাংলো ছিল। অন্য জেলার নীলকুঠি থেকে ফরিদপুর শহরের কুঠিবাড়ি ( নীলকুঠি ) সম্পূর্ণ আলাদা। নীলকুঠি বলতে নীলের কারখানা, কর্মচারি ও অফিসারের বাসস্থান, গুদাম, ইত্যাদিসহ পুরো একটা কমপ্লেক্স ।মেহেরপুরের নীলকুঠি ৭৭ একর জমির উপর নির্মিত। আমার ধারণা শহরের কুঠিবাড়িটি নির্মিত হয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দির শেষের দিকে যেখেতু Dunloff সাহেবের ফরিদপুর আগমন ১৭৮৯ সনে।ফরিদপুর জেলার নীল ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য জেলা হেডকোয়াটারে কোম্পানীর অফিস ও রেষ্টহাউজ হিসেব এই কুঠিবাড়ি নির্মান করা হয় । ধারনা করছি ‘কুঠিবাড়ি কমলাপুর’ নামকরনের সময় এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থপনা ছিল বা একমাত্র দৃশ্যমান বিল্ডিং/ দালান ছিল। এখন প্রশ্ন কুঠিবাড়িটি কোথায় অবস্থিত ছিল।ঐ এলাকায় নুতন ঘরবাড়ি নির্মান শুরু হয় ১৯৮০ সনের দিকে। আমার ধারনা কুঠিবাড়ি ভেঙ্গে সুইট ফিরোজার রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাই যদি হয় তাহলে যারা এ কাজটা করেছে তাদের খোঁজ নেয়া উচিত ছিল এ স্থাপনাটির কোন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্বিক গুরুত্ব আছে কিনা? কুঠিবাড়ির সঠিক স্থান (Location) বের করা খুবই সহজ , এর জন্য সরকারি ভুমি অফিসের সহযোগিতা লাগবে। ১৯৪১-৪৪ সনের ভূমি জরিপের (Survey) ম্যাপ ব্যবহার করে ১০০% সঠিকভাবে বিল্ডিংয়ের অবস্থান নির্ণয় করা যাবে। আমরা আর একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হারালাম।জানিনা প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের কাজ কি ?নীল চাষীদের বিদ্রোহের গৌরবান্বিত ইতিহাস আছে ফরিদপুর জেলার। ১৮৩৮ সনে হাজী শরিয়াতুল্লার সুযোগ্য পুত্র মহসিন উদ্দিন আহমেদের,বেশী পরিচিত দুদু মিয়া নামে, নেতৃত্বে চাষীরা নীল কোম্পানীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, নীলকুঠি আক্রমন করে তছনছ করে দেয় এরং জমিদারদের খাজনা দেয়া বন্ধ করে দেয় । জমিদার ও নীল কোম্পানী দুদুমিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে, ফলোস্রুতিতে ১৮৩৮, ১৮৪৪, ১৮৪৭ সালে উপনিবেশিক সরকার তাকে গ্রেফতার করে। কোন সাক্ষী না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।এখান থেকেই নীল চাষীদের বিদ্রোহ শুর এবং অবিভক্ত বাংলার অন্য জায়গায়ও এর প্রভাব পরতে থাকে। যশোর ও নদিয়া জেলায় ১৮৫৯ সনে বড় আকারের বিদ্রোহ হয় এবং ১৯৬২ সনের পর থেকে ইউরোপীয় নীল আবাদকারীরা আস্তে আস্তে নীল চাষ বন্ধ করে দেশে ফিরে যেতে থাকে ।ফরিদপুর জেলার গৌরবোজ্জল ইতিহাসের ( দুদু মিয়ার ইতিহাস) সাথে সম্পর্কিত কুঠিবাড়ি কমলাপুরের ‘কুঠিবাড়ি’ কিভাবে কোন রকম চিন্তাভাবনা ছাড়া ভেঙ্গে ফেলা হলো?

লিখেছেন জনাব কামরুল বারি কামাল।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *