নবাব আব্দুল লতিফ
নবাব আবদুল লতিফ (১৮২৮ – ১৮৯৩) ১৯শ শতকের বাঙালি মুসলিম শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী। তিনি মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা। সমাজের নানান ক্ষেত্রে অবদান পাওয়া নবাব আব্দুল লতিফ এর বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী
জন্ম: মার্চ ১৮২৮, রাজাপুর গ্রাম, ভূষণা থানা, ফরিদপুর, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু: ১০ জুলাই ১৮৯৩, কলকাতা।
বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কলকাতা মাদ্রাসা
পেশা: শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা
পুরস্কার ও উপাধি: খান বাহাদুর (১৮৭৭), নবাব (১৮৮০), সি.আই.ই. (১৮৮৩), নবাব বাহাদুর (১৮৮৭), অর্ডার অব দি মাজিদি
জন্ম ও পরিবারঃ
নবাব আব্দুল লতিফ জন্মগ্রহণ করেন ফরিদপুর জেলার (বর্তমান বোয়ালমারী উপজেলার) রাজাপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে। তাঁর পিতা কাজী ফকির মুহাম্মাদ কলকাতা সদর দেওয়ানি আদালতের আইনজীবী ছিলেন। বিখ্যাত কবি আব্দুল গফুর নাস্সাখ ছিলেন তার ছোট ভাই।
শিক্ষা জীবনঃ
তার পিতা ইংরেজি ও আরবি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝে তাকে কলকাতা মাদ্রাসায় ভর্তি করান। সেখানে তিনি অল্প সময়েই ইংরেজি, আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।
কর্মজীবনঃ
শিক্ষকতা শুরু করেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে।
পরে কলকাতা মাদ্রাসায় ইংরেজি ও আরবি অধ্যাপক নিযুক্ত হন।
১৮৪৯ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন এবং ১৮৭৭ সালে প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হন।
সাতক্ষীরায় কর্মরত থাকাকালে তিনি নীল চাষীদের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে কাজ করেন এবং ১৮৬০ সালের নীল কমিশন গঠনে ভূমিকা রাখেন।
শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে অবদানঃ
মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে আজীবন কাজ করেন।
১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন Mohammedan Literary Society, যার লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা বিস্তার ও হিন্দু-মুসলিম-ইংরেজ শিক্ষিতদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা।
কলকাতা মাদ্রাসায় বাংলা ও উর্দু ভাষা শিক্ষা চালু করেন।
মহসীন ফান্ড মুসলমানদের শিক্ষার জন্য সংরক্ষণে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল।
রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ছিলেন।
স্যার সৈয়দ আহমদ খানের Scientific Society of Aligarh-এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ধর্ম ও রাজনীতি সচেতনতায় অবদানঃ
তিনি মুসলমানদেরকে আধুনিক শাসনব্যবস্থার সুফল গ্রহণ ও ব্রিটিশের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। মাওলানা কেরামত আলীর মাধ্যমে ঘোষণা দেন যে ব্রিটিশ ভারতে বসবাস ‘দারুল হারব’ নয়, বরং ‘দারুল ইসলাম’।
আত্মজীবনীঃ
তিনি নিজের আত্মজীবনী রচনা করেন, যা ১৯৭৮ সালে মেহরাব পাবলিকেশন (চট্টগ্রাম) থেকে প্রকাশিত হয়। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মোহাম্মদ মোহর আলী এটি সম্পাদনা করেন।
মৃত্যুঃ
নওয়াব আব্দুল লতিফ ১৮৯৩ সালের ১০ জুলাই কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখযোগ্য তথ্য:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে: “নবাব আব্দুল লতিফ হল”।
তিনি ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের সহপাঠী।
Recent Comments